পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মধ্যেই রয়েছে শিক্ষার সম্পূর্ণতা। সম্প্রতি শিক্ষা সফরের আয়োজন করে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের যোগাযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগ। ২১ নভেম্বর মানিকগঞ্জের বালিয়াটি জমিদারবাড়িতে দিনব্যাপী এ আয়োজন উপভোগ করেন শতাধিক শিক্ষার্থী
হালকা কুয়াশা পড়া সকালে সবাই এসে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ৭টায় যেন থেমে আছে। ধীরে ধীরে মোটামুটি সবার আসা নিশ্চিত হওয়ার পর ধানমন্ডির বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে সকাল ৮টায় যাত্রা শুরু হয় বালিয়াটি জমিদার বাড়ির উদ্দেশে। শতাধিক শিক্ষার্থীসহ দুটি বাস গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। কারো চোখে হয়তো তখনো ঘুম লেগে আছে, কিন্তু বাসে ওঠার পর হইচই আর আনন্দে সেই ঘুম উধাও হয়ে গেল। আর সবকিছুর সঙ্গে গান তো রয়েছেই। সবাই যার যার জায়গা বেছে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বেচ্ছাসেবকরা সবার হাতে সকালের নাশতা পৌঁছে দিলেন। বাস চলছে সেই সঙ্গে চলছে গল্প, আনন্দ আর গান। কেউবা বাসের ভেতরেই ছবি তোলায় ব্যস্ত। ততক্ষণে গাড়িটি সাভার পেরিয়ে গিয়েছে। হালকা ঠাণ্ডা আবহাওয়া যেন সায় দিচ্ছে শিক্ষা সফরের আনন্দকে। তবে সব আনন্দের মধ্যেও নিজের অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করার পরিকল্পনা চলছিল সবার মনেই। কেননা শিক্ষা সফরের আগেই প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। অর্থাত্ সব আনন্দের মাঝে মিডটার্ম-পরবর্তী অ্যাসাইনমেন্টও যাতে সম্পন্ন করা যায় সেই উদ্যোগই নেয়া হয়েছিল। ঘড়ির কাঁটা বেলা ১১টা ছুঁই ছুঁই করছে, তখন মাইকে ঘোষণা দেয়া হলো আর কিছুক্ষণের মধ্যে মানিকগঞ্জ বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করবে বাস। ঘোষণা শোনামাত্রই সবাই একসঙ্গে আনন্দধ্বনি করে উঠল।
বাস এসে থামল জমিদার বাড়ির একটু আগে বড় একটি মাঠে। সব শিক্ষার্থী বাস থেকে নেমে জড়ো হলো সেখানে। এবার জমিদার বাড়ির উদ্দেশে পায়ে হেঁটে যাত্রা। ৫ মিনিটের পথ শেষে জমিদার বাড়ির বিশাল ফটকের সামনে সবাই হাজির। একে একে তারা প্রবেশ করল বাড়ির ভেতর। সেখানে জমায়েত হওয়ার পর উপস্থিত শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিলেন কীভাবে ছবি, ভিডিও ফুটেজ, তথ্য ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা নিজেদের কাজ শুরু করলেন। নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হলো, যাতে সেই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যায়। তাই বলে যে ঘোরাঘুরি বন্ধ, তা কিন্তু নয়। কেননা নিজেদের অ্যাসাইনমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি ঘুরে দেখার জন্যও পর্যাপ্ত সময় রয়েছে। কেউ হয়তো আগে কাজ শেষ করছে কেউবা ঘুরে দেখতে দেখতেই ফুটেজ সংগ্রহ করছে। ঐতিহাসিক এ স্থানটির ভবনগুলো অপূর্ব কারুকাজে সমৃদ্ধ। প্রতিটি দেয়ালের পরতে যেন সৌন্দর্যের ছোঁয়া। ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা অন্যান্য জমিদার বাড়ির চেয়ে একটু হলেও বাড়তি সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় বালিয়াটির এই বাড়িতে। ২০ একর জমিতে গড়ে ওঠা ১৯ শতকের পুরনো এ প্রাসাদগুলো সে সময়ের না জানা গল্প প্রকাশ করতে সক্ষম। জমিদার বাড়ির সিংহ দরজায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে প্রশস্ত আঙিনা। একই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে কারুকার্যখচিত চারটি বহুতল ভবন। এগুলোর পেছনে জমিদার বাড়ির অন্দরমহল এবং রয়েছে বাঁধানো পুকুর ঘাট। বাংলাদেশের যতগুলো জমিদার বাড়ি রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। এ বাড়িতে বিভিন্ন স্থিরচিত্র ও অজানা তথ্য সংগ্রহ করেন ইউডার যোগাযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের শিক্ষার্থীরা। জমিদার বাড়ির ওপর বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করার জন্য তথ্য, ছবি সংগ্রহ করেন তারা। পরবর্তীতে জমিদার বাড়ি নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ও বিশেষ প্রতিবেদন নিয়ে সেমিনার, প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। ঘুরে দেখতে দেখতে কখন যে দুপুর হয়েছে কেউ টের পায়নি। তবে পেটের ক্ষুধা জানান দিচ্ছে সময় হয়েছে। ততক্ষণে খাবার রান্নাও শেষ হয়েছে। জমিদার বাড়ির সামনে খোলা মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে সবাই দুপুরের আহার পর্ব সেরে নিল। এর পর শুরু হলো আনন্দ আয়োজন। গান, কুইজ, লাকি কুপন ইত্যাদি হালকা বিনোদন শেষ হলো শিক্ষকদের বক্তব্য দিয়ে। এবার ফেরার পালা, দলবেঁধে আবার সবাই বাসে চেপে বসল। কিন্তু সবাই খানিকটা বিষণ্ন। সারা দিনের ক্লান্তি যতটা না জেঁকে বসেছে, তার চেয়ে বেশি গ্রাস করেছে ফেরার দুঃখবোধ। তবে প্রতি বছরই এমন আয়োজন যেহেতু হবে, তাই ম্লান হওয়া আনন্দের কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে সবার মধ্যেই।
তথ্য সংগৃহিত: বণিক বার্তা